UCA News
Contribute

বাংলাদেশী যাজকের বিরুদ্ধে নারী ও অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের সাথে যৌন সম্পর্কের অভিযোগ

পুলিশ ফাদার ওয়াল্টার রোজারিও’র সাথে নারী ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের যৌন সম্পর্কের অভিযোগ করা সত্ত্বেও চার্চ কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি
বাংলাদেশী যাজকের বিরুদ্ধে নারী ও অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের সাথে যৌন সম্পর্কের অভিযোগ

ছবিতে ফাদার ওয়াল্টার উইলিয়াম রোজারিও’কে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় নাটোর জেলার সেন্ট লুইস উচ্চ বিদ্যালয়ে তার অফিস কক্ষে দেখা যাচ্ছে। (ফাইল ছবি: সেন্ট পৌল ক্যাফের সৌজন্যে)

Published: June 14, 2018 10:21 PM GMT
Updated: July 07, 2018 06:17 AM GMT

পোপ ফ্রান্সিসের বাংলাদেশ সফরের কয়েকদিন আগে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়া বাংলাদেশী যাজকের ঘটনা এক অশুভ মোড় নিয়েছে।

প্রাথমিকভাবে পুলিশ ফাদার উইলিয়াম রোজারিও’র পরিত্যক্ত মোটরসাইকেল উদ্ধার এবং তার মোবাইল বন্ধ পাওয়ার পর সন্দেহ করে তিনি হয়তোবা ইসলামী জঙ্গিদের দ্বারা অপহরণের শিকার হয়েছেন।

কিন্তু পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, ৪১ বয়সী এই যাজক বেশ কয়েকজন নারী এবং কমপক্ষে একজন ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়ের সাথে আপত্তিকর সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলেন।

বড়াইগ্রাম থানার পুলিশ পরিদর্শক সৈকত হাসান ইউকানকে বলেন,“আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমি নিশ্চিৎ ভাবে বলতে পারি, ঐ যাজকের সঙ্গে ৫ জন মহিলা এবং একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের অবৈধ এবং শারীরিক সম্পর্ক ছিল। এদের মধ্যে ১৭ বছর বয়সী কলেজ পড়ুয়া একজন মেয়ে স্বীকার করেছেন তার সাথে এই যাজকের অবৈধ সম্পর্ক ছিল।

ফাদার রোজারিও সে সময় নাটোর জেলার জোনাইল ইউনিয়নে অবস্থিত শক্তিদায়িণী মা মারীয়া কাথলিক চার্চ, বোর্নী-এর সহকারী পালপুরোহিত এবং স্থানীয় চার্চ পরিচালিত সেন্ট লুইস উচ্চ বিদ্যালয়-এর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন। গত বছরের ২৭ নভেম্বর নিখোঁজ হওয়ার পূর্বে তিনি পোপের বাংলাদেশ সফরের প্রস্তুতি কাজে জড়িত ছিলেন।

১ ডিসেম্বর পুলিশ যাজককে নাটোর থেকে প্রায় ৪১০ কিলোমিটার দূরের সিলেট শহর থেকে উদ্ধার করে।

এর আগে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায় তিনি তার কথিত অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এসে তার ভাইকে সাহায্যের জন্য ফোন করেন।

পরের দিন নাটোর পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলনে জানান, ফাদার রোজারিও কোনো অপহরনের শিকার হননি কিন্তু তিনি তার মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে স্বেচ্ছায় নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন।

চারদিন যাবৎ যাজকের খোঁজ পেতে বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ ২০ জনের মত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং এর মধ্যে ১১ জন মহিলা এবং কয়েকজন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে ছিল।

যাজকের রুমে পাওয়া ২টি ল্যাপটপ এবং কিছু মোবাইল সিমকার্ডের সূত্র ধরে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে জানা যায়।

পরে পুলিশ যখন ফাদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তখন জানা যায় যাদের সাথে এই যাজকের অবৈধ সম্পর্ক ছিল তাদের মুখ বন্ধ রাখার জন্য তিনি স্কুল ফান্ডের অর্থ আত্মসাৎ করেছিল।

পুলিশ জানিয়েছে ১৫ বছর বয়সী মেয়ে ম্যাগডেলিন পেরেরার ফোন রেকর্ড থেকে প্রমাণ হয় এই যাজক তাকে অশালীন মেসেজ পাঠিয়েছেন যার মধ্যে একাধিকবার ছিল ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’।

পুলিশ কর্মকর্তা হাসান বলেন, “মেয়েটি ফাদারের সাথে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে কিনা তা স্বীকার করেনি কিন্তু স্বীকার করেছে যে, ফাদার তার ঠোঁটে একবার চুমো দিয়েছিল”।

সিলেটে ফাদার রোজারিও’কে পাওয়ার পরে ডিসেম্বর এর ২ তারিখে পুলিশ পাহারায় তাকে ঢাকায় আনা হয় এবং পরে নাটোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

পুলিশের কাছে ডিসেম্বর ৩ তারিখে দেয়া জবানবন্দি অনুসারে, ফাদার স্বীকার করেন তাকে কেউ অপহরণ করেনি কিন্তু তিনি নিজেই আত্মগোপনে গিয়েছিলেন। তিনি দাবি করেন কেউ একজন তাকে ব্লেকমেইল করছিল তাই তিনি মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত ছিলেন। পুলিশের কাছে সংরক্ষিত এই জবানবন্দি ইউকান দেখেছে।

পরিদর্শক হাসান বলেন, ফাদার স্বীকার করেন ৪ জন নারীর তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক ছিল এবং এর মধ্যে একজন ২৮ বছর বয়সী অনিতা রায়।

জানা যায় তাদের মধ্যে সম্পর্কের সূচনা ৩১ ডিসেম্বর ২০০৮ এ তার যাজকীয় অভিষেকের পর থেকেই।

রাজশাহী শহরের বেশ ক’জন কাথলিক খ্রীষ্টান ইউকানকে জানিয়েছেন, ২০০৯ সালের দিকে তারা এই যাজককে অনিতা রায়ের বাসায় রাতে বেশ কয়েকবার দেখেছেন। তখন অনিতা রায়ের বয়স ছিল আনুমানিক ২০ বছর।

অনিতা রায় পুলিশের কাছে স্বীকার করেন তার কাছে ফাদারের কিছু অন্তরঙ্গ মূহুর্তের ছবি ছিল এবং সেগুলো সে পুলিশকে দেখিয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তা হাসান বলেন, “সম্প্রতি অনিতা রায় সন্দেহ করতে শুরু করে ফাদার হয়তো তার সাথে প্রতারণা করছেন, তাই সেও তার সাথে প্রতারণা করার চেষ্টা করেছিল। ফাদার ভয়ে ছিলেন এবং তার জন্য অনিতাকে গত বছর দুই লক্ষ টাকা দেন”।

পুলিশ আরো জানায়, “এই অর্থের অর্ধেক তিনি যে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন সেখানকার তহবিল থেকে নেন এবং বাকী অর্থ তিনি বিশপের তহবিল থেকে ধার হিসেবে নেন। মনে হয় যাজক তাদের অবৈধ সম্পর্কের ব্যাপারে অনিতার মুখ বন্ধ রাখার জন্য এই অর্থ দেন। এটাই ফাদারের নিরুদ্দেশ হওয়ার মূল কারণ।”

অভিযোগসমূহ

১৬ বছর বয়সী মেয়ে মারীয়া রিবেরু সেন্ট লুইস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী। ২০১৭ সালে অক্টোবর মাসে সে স্কুলের অনুষ্ঠানে নাচের কিছু ছবি আনার জন্য যাজকের অফিস কক্ষে যায়।

মেয়েটি দাবি করে, যাজক তাকে ছবিগুলো দেয়ার সময় হঠাৎ তার ডান হাত চেপে ধরে।

মেয়েটি বলে, “আমি খুব বিস্মিত এবং হতভম্ব হয়ে পড়ি এবং দ্রুত হাত ছাড়িয়ে নিয়ে সোজা বাড়িতে চলে যাই”।

যখন মারীয়া তার বড় বোন জেসমিনকে এই ঘটনা সম্পর্কে জানায়, তখন জেসমিন মারিয়াকে বলে সে যেন যাজকের কাছ থেকে দূরে থাকে। কারণ, অনেক মানুষ বলাবলি করে ফাদারের সাথে অনেক মহিলা এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের অনৈতিক সম্পর্ক আছে।

মারিয়া বলে, “তার পর থেকে আমি যাজকের ব্যাপারে খুব সতর্ক হয়ে যাই এবং দূরত্ব বজায় রেখে চলি” । সে আরো জানায়, তার প্রতি যাজকের এই অনাকাঙ্ক্ষিত সুযোগ নেয়ার চেষ্টা সেটাই প্রথম নয় ”।

২০১৭ সালের আগস্ট মাসের দিকে ফাদার রোজারিও মারীয়ার সাথে ফোনে কথা বলার সময় জিজ্ঞাসা করেছিলেন তার পরিবার কি কোন ফাদারকে তাদের পরিবারের জামাই হিসেবে মেনে নিবে কি না।

মারীয়া বলেন, “কথাটি আমার কাছে হাস্যকর এবং অদ্ভুত মনে হয় তাই আমি এটাকে গুরুত্ব সহকারে নেইনি। আমি মনে করেছিলাম তিনি আমার সঙ্গে মজা করছেন।”

মারীয়া আরও বলে, “তিনি আমাকে মাঝে মাঝে ফোন করতেন পড়াশোনার খবর নিতে এবং স্কুলের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে; আমি সর্বদা তাকে একজন পুরোহিত এবং প্রধান শিক্ষক হিসেবে শ্রদ্ধার দৃষ্টিতেই দেখেছি।”

এই স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক এবং স্থানীয় কয়েকজন কাথলিক খ্রীষ্টান তাদের নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানিয়েছেন, আরেকজন ছাত্রী ম্যাগডেলিন পেরেরা, ১৫ এর সাথেও ফাদারের অস্বাভাবিক সম্পর্ক ছিল ছিল।

ম্যাগডেলিন ইউকানকে বলেন, “তিনি ছিলেন একজন পুরোহিত, আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং স্থানীয় ওয়াইসিএস এর পরিচালক । আমি ওয়াইসিএস এর সভাপতি ছিলাম তাই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে ফাদারের সাথে যোগাযোগ হতো। এটা নিয়ে যদি মানুষ বাজে কথা রটায় তাহলে তা আমার জন্য হতাশাজনক।”

যে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের সাথে ফাদাদের শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে পুলিশ তার নাম ঠিকানা প্রকাশ করতে রাজি হয়নি। প্রাথকিকভাবে ম্যাগডেলিন ইউকান সংবাদদাতাকে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হলেও, পরে সে পূর্ব নির্ধারিত স্থান ও সময়ে দেখা করেনি এবং অনেক চেষ্টা করেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সেন্ট লুইস উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র শিক্ষক ডেভিড গমেজ জানান, গত বছর এক ছুটির দিনে তিনি তার ব্যক্তিগত কাজে স্কুলে যান এবং যাজকের অফিস কক্ষে ম্যাগডেলিন পেরেরাকে দেখতে পান।

এই শিক্ষক বলেন, “বিষয়টা আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয় এবং আমি মনে মনে রাগান্বিত হই।”

তিনি দাবি করেন যে এই যাজকের সঙ্গে বেশ কয়েকজন মহিলা এবং মেয়ের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক আছে এটা এলাকায় সবাই জানতো কিন্তু চার্চ কর্তৃপক্ষের ভয়ে মানুষ এতোদিন মুখ খোলেনি।

তিনি বলেন, “আমি জানতাম ফাদার অল্পবয়সী মেয়েদের প্রতি আকৃষ্ট, বিশেষ করে যারা ভালো গান গায় এবং নাচতে পারে। আমি এগুলোকে সবসময় এড়িয়ে চলতাম কারণ, কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে আমার কোন আগ্রহ নেই। কিন্তু মানুষজন যখন এটাকে আমার নজরে আনলো তখন আমি বিষয়টি লক্ষ্য করলাম।”

ফাদার ওয়াল্টার রোজারিও'র আত্মপক্ষ সমর্থন

ফাদার রোজারিও পুলিশের কাছে বলা সব কথা অস্বীকার করেন কিন্তু “পরিস্থিতির কারণে যে সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে’’ তাকে চ্যালেঞ্জ করতেও আগ্রহী নন বলে জানান।

তিনি বলেন, “আমি এটাকে চ্যালেঞ্জ করতে চাই না অথবা এটা নিয়ে বেশি কথা বলতেও চাই না। এটা আমার জন্য আরো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আমি আবার নতুন করে আমার যাজকীয় দায়িত্ব পালনকরতে শুরু করেছি।”।

ফাদার রোজারিও বলেন তিনি খুব শীঘ্রই স্কুলের তহবিল থেকে নেয়া অর্থ ফেরত দিবেন।

মে মাসের ২৪ তারিখে ইউকান সংবাদদাতার সাথে যাজকের যখন কথা হয় তখন তিনি বলেন যে তিনি হতাশা থেকে মুক্তি পেতে নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন, কিন্তু মহিলা ও মেয়েদের সাথে শারীরিক সম্পর্কের কথা তিনি অস্বীকার করেন।

ফাদার রোজারিও বলেন, “যখন পুলিশ আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তখন আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলাম। আমি বিভিন্ন চাপে অনেক কিছু বলতে বাধ্য হয়েছি। আমার সাথে অনেকের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল কিন্তু কারো সাথে শারীরিক সম্পর্ক হয়নি।”

“আমি আমার যাজকীয় জীবনে কৌমার্য ব্রত ভঙ্গ করিনি”।

তিনি নবম শ্রেনী পড়ুয়া কোনো মেয়েকে চুমো দিয়েছেন বা মোবাইলে কোনো অশালীন এসএমএস পাঠিয়েছেন কিনা এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

তিনি অনিতা রায়ের সাথে তার শারীরিক সম্পর্কের কথাও অস্বীকার করেন কিন্তু স্বীকার করেন যে, তিনি তাকে ২০১৭ সালে টাকা দেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অনিতা রায় তার কিছু নগ্ন ছবি অনলাইনে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছিল।

যাজক বলেন, “ডিজিটাল যুগে ভুয়া ছবি বানানো সম্ভব। কিন্তু যদি সে তার কাছে যা ছিল বলে সে দাবি করেছিল তা প্রকাশ করতো তাহলে আমার যাজকীয় জীবন বড় হুমকির মুখে পড়তো। আমি টাকা দিয়ে তাকে এই কাজ করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছি”।

ডিসেম্বরে ফাদার রোজারিওকে খুঁজে পাওয়ার পর তিনি রাজশাহীতে বিশপ হাউজে বিশপ জের্ভাস রোজারিও এর তত্ত্বাবধানে ছিলেন। বোর্ণী মিশন রাজশাহী কাথলিক ধর্মপ্রদেশের অধীনস্থ এবং সেখানে বাংলাদেশের ৩৫০,০০০ কাথলিকের মধ্যে ৬০,০০০ কাথলিক এর বসবাস।

বিশপের তত্ত্বাবধানে এই বিষয়টি অনুসন্ধান করতে ধর্মপ্রদেশীয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা, হয় কিন্তু কমিটির অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত আজ অবধি জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি।

ফাদার রোজারিও ডিসেম্বর থেকে বোর্ণীতে তার দায়িত্বে ফেরত যান নি।

ফেব্রুয়ারি মাসে ফাদার রোজারিওকে রাজশাহীতে উত্তম মেষপালক কাথিড্রালে ধর্মপল্লীর সহকারী পাল-পুরোহিত হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।

এপ্রিলের শেষে তাকে সিরাজগঞ্জ জেলায় অবস্থিত গুল্টা কাথলিক মিশনে দুই মাসের জন্য ভারপ্রাপ্ত পাল-পুরোহিত হিসেবে পাঠানো হয়।

তবে তার পূর্বের দায়িত্ব সেন্ট লুইস উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অপসারন করা হয়নি।

বিশপের ভাষ্য

বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনীর সহ-সভাপতি বিশপ জের্ভাস রোজারিও ইউকানকে বলেন, তিনি ন্যায় বিচারের প্রতি দায়বদ্ধ এবং সকলের জন্য যা সঠিক তিনি তাই করছেন। ”

বিশপ বলেন ,“আমি দেখার অপেক্ষায় ছিলাম পুলিশ কোনো কিছু পায় কি না যেটা বাংলাদেশে আইনের বিরুদ্ধে যায়। দৃশ্যত তারা ফাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার মত কিছু খুঁজে পায়নি”।

বিশপ বলেন,“তার পরেও আমি পালপুরোহিতকে একটি তদন্তের কথা বলেছিলাম কিন্তু তিনিও ফাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার মত কিছু খুঁজে পান নি কিন্তু তিনি ঐ যাজকের অবিবেচনা প্রসূত কিছু কার্যকলাপের নমুনা খুঁজে পান।”

“আমি নিজেই তাকে কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছি কিন্তু সে তার কৌমার্য ব্রত ভঙ্গের কথা প্রতিবারই অস্বীকার করেছে।”

বিশপ রোজারিও ডিসেম্বরে ফাদারের নিরুদ্দেশ সম্পর্কে দেয়া তার বিবৃতি থেকে সরে আসেন।

বিশপ রোজারিও তখন বলেছিলেন, পুলিশ যাজকের নিরুদ্দেশ হওয়া সম্পর্কে একটা বাঁনোয়াট গল্প ফেঁদেছে এবং এই কারণে পুলিশ বলছে যাজক নিজে নিজে মানসিক চাপ থেকে নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন।

পরে তিনি ইউকানকে বলেন, “অনিতা রায় তার মুসলিম ছেলেবন্ধুর সাথে ফাদারের বিরুদ্ধে একটা যড়যন্ত্র করেছিল। ফাদার একটা বোকার মত কাজ করেছে সে এটা কারো সাথে সহভাগিতা করেনি এবং গোপনে তাকে টাকা দিয়েছে।”

এশিয়াব্যাপী ‘বজ্রপাতের আশঙ্কা’

পুলিশ অফিসার হাসান বলেন, পুলিশ ফাদার রোজারিও’র বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না যতক্ষণ না কোন ভুক্তভোগী ব্যক্তি বা তার পরিবার কোন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করে।

কাথলিক মানবাধিকার কর্মী এবং হটলাইন হিউম্যান রাইটস্ ট্রাষ্ট-এর সাবেক নির্বাহী পরিচালক প্রাক্তন সিস্টার রোজলীন কস্তা বলেন, বাংলাদেশের মত দরিদ্র দেশে যাজকদের দ্বারা এই ধরণের অনৈতিক কর্মকান্ড হরহামেশাই ঘটছে, যেখানে অধিকাংশ কাথলিক স্বল্পশিক্ষিত এবং চার্চকে ভয় পায়।

রোজলীন কস্তা ২০১৭ সাল থেকে নিউ ইয়র্কে বসবাস করছেন।

তিনি বলেন, “আমি জানি অনেক ফাদার এরকম অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিশপ এবং ভিকার জেনারেলরা তাদের সুরক্ষা দেন। খুব কম ক্ষেত্রেই নির্যাতিত শিশুরা এই ব্যাপারে মুখ খোলে, কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা বুঝতে পারে না তাদের সাথে কি ঘটনা ঘটেছে।”

তিনি বলেন, যারা এ ধরণের অপরাধে অপরাধী তারা অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদেরকে অনেক টাকা পয়সা এবং বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ করে দেয়ার মাধ্যমে তাদের মুখ বন্ধ করে রাখেন। তিনি বলেন, মূলত দরিদ্র ও অভাবী পরিবারের মেয়েরাই এই ধরণের যাজকদের খপ্পরে পড়ে। ”

রোজলীন আরো বলেন, “আমি একজন বিদেশী পুরোহিত সম্পর্কে জানি যিনি গরিব মেয়েদের শিক্ষা সহায়তা এবং তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করতেন। এর বিনিময়ে সে যাজক অভাবী মেয়েদের শরীর দাবি করতো।”

বাংলাদেশী আইনে শিশুদের যৌন নির্যাতনের বেশ মারাত্মক শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।

যদি কোনো ব্যক্তি শিশু নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত প্রমাণিত হন তবে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইন ২০০০ অনুযায়ী তার সাজা সর্বনিম্ন ১০ বছর থেকে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদন্ড হতে পারে বলে জানিয়েছেন ঢাকাভিত্তিক একটি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক এবং সুপ্রীম কোর্টের এ্যাডভোকেট নীনা গোস্বামী।

তিনি আরো জানান, এই ধরণের নির্যাতন ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগে শাস্তির ব্যাপারে আইনে কিছু বলা নেই তবে আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তির অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী যে কোনো মেয়াদে সাজা দিতে পারেন।

বাংলাদেশের মত একটি রক্ষণশীল এবং ব্যাপকভাবে ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত সমাজ ব্যবস্থায় কোনো নির্যাতিত শিশু এবং তার পরিবারের পক্ষে নির্যাতনকারী এবং ধর্মীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াঁনো এবং আইনী লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘটনা খুবই বিরল।

রোজলীন কস্তা মনে করেন যে, শিশু নির্যাতনের ঘটনা ইউরোপ, আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার কাথলিক চার্চকে যেভাবে বিপর্যস্ত করেছে তা শুধু বাংলাদেশে নয় পুরো এশিয়াতে ঘটতে খুব বেশি দেরি নেই।

তিনি আরো বলেন, “আমি মনে করি না যে বাংলাদেশের কাথলিক খ্রীষ্টান সম্প্রদায় ইউরোপ, আমেরিকা এবং অষ্ট্রেলিয়ায় যা ঘটেছে তার থেকে খুব বেশি দূরে আছে। যখন এই ধরণের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করবে, তখন তা হবে বোমা বিস্ফোরণ অথবা বজ্রপাতের ন্যায় বিধ্বংসী।"

(সাক্ষ্যদানকারী ভুক্তভোগীদের নাম এবং একজন শিক্ষকের নাম তাদের অনুরোধে ও তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে পরিবর্তন করা হয়েছে)

 

Help UCA News to be independent
Dear reader,
Lent is the season during which catechumens make their final preparations to be welcomed into the Church.
Each year during Lent, UCA News presents the stories of people who will join the Church in proclaiming that Jesus Christ is their Lord. The stories of how women and men who will be baptized came to believe in Christ are inspirations for all of us as we prepare to celebrate the Church's chief feast.
Help us with your donations to bring such stories of faith that make a difference in the Church and society.
A small contribution of US$5 will support us continue our mission…
William J. Grimm
Publisher
UCA News
Asian Bishops
Latest News
UCA News Catholic Dioceses in Asia
UCA News Catholic Dioceses in Asia
UCA News Catholic Dioceses in Asia